ঢাকা ০১:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্রে লেখা `মেইড ইন ইন্ডিয়া

সমকন্ঠ ডেক্স

বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল, ধ্বংস হচ্ছে ঘর-বাড়ি, হুমকির মুখে পুরো একটি পজন্ম। ইসরাইলি বাহিনীর চালানো নির্বিচার হামলায় এই যখন ফিলিস্তিনের অবস্থা তখনও ইসরাইলকে গোপনে সাহায্য করে যাচ্ছে কয়েকটি শক্তিশালী দেশ। আর এমনই একটি দেশ হলো ভারত।

ইসরাইলের পরম বন্ধু হিসেবে নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে চেষ্টার কোনো কমতিই রাখছে না ভারত। তবে সম্প্রতি ইসরাইলকে রকেট ও বিস্ফোরক রপ্তানি করার খবরে আবারও আলোচনায় এসেছে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি। এক প্রতিবেদনে এমনই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা।

ঘটনার সূত্রপাত রহস্যময় এক জাহাজকে কেন্দ্র করে। গত ১৫ মে ভোরে স্পেনের কার্তাহেনা বন্দরের উপকূলে এসে পৌঁছায় মালবাহী জাহাজ বোরকাম। বন্দর থেকে অল্প দূরে সমুদ্রে অবস্থানরত এই জাহাজের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি পতাকা উড়িয়ে বিক্ষোভ প্রকাশ করে স্পেনের জনগণ। তাদের দাবি, এই জাহাজে করে ইসরায়েলের জন্য অস্ত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে এই ‘সন্দেহজনক’ জাহাজ পরিদর্শন করার আহ্বান জানায়।

তবে স্পেন সরকার কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগেই স্পেনের বন্দরে থামার পরিকল্পনা বাতিল করে স্লোভেনিয়ার বন্দর কোপারের উদ্দেশে রওনা হয়ে যায় বোরকাম নামের জাহাজটি। এতে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়।

আল জাজিরার হাতে কিছু নথি এসেছে, যা থেকে জানা গেছে এই জাহাজটিতে ভারত থেকে নিয়ে আসা বিস্ফোরক উপকরণবোঝাই করা ছিল এবং এর শেষ গন্তব্য ছিল ইসরায়েলি বন্দর আশদোদ, যা গাজা উপত্যকা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে। আর মেরিন ট্র্যাকিং সাইটের তথ্য থেকে জানা যায়, জাহাজটি গত ২ এপ্রিল চেন্নাই থেকে ছেড়ে আসে।

এসব ঘটনা থেকে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে, ভারত ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র রপ্তানি করছে, যা দেশটির ‘সামরিক উদ্যোগ নয়, সংলাপের মাধ্যমে সমাধান’ নামক পররাষ্ট্রনীতির পরিপন্থী। বেশ কয়েক বছর ধরে ইসরায়েল ও ভারতের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটছে, তাই ভারতীয় অস্ত্র বা উপকরণ ইসরায়েলের হাতে এসে পৌঁছানোর এবং তা গাজায় ব্যবহার অসম্ভব কিছু নয়।

৬ জুন নুসেইরাত আশ্রয়শিবিরে ইসরায়েলি বোমাহামলার পর ফিলিস্তিনি কুদস নিউজ নেটওয়ার্ক একটি ভিডিও প্রকাশ করে। সেখানে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষেপ করা একটি ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ দেখানো হয়। ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষে পরিষ্কারভাবে একটি লেবেল দেখা যায়, যেখানে লেখা ছিল, ‘মেইড ইন ইন্ডিয়া।

ইসরায়েলের সঙ্গে শুধু রকেট নয়, ড্রোন নিয়েও লেনদেন রয়েছে ভারতের। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে গৌতম আদানির প্রতিষ্ঠান আদানি ডিফেন্স অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ও ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান এলবিট সিস্টেমসের যৌথ উদ্যোগে হায়দ্রাবাদে ড্রোন উৎপাদন কারখানার উদ্বোধন হয়।

ভারত ১৯৫০ সালে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিলেও দুই দেশের কূটনীতিক সম্পর্ক তৈরি হয় ১৯৯২ সালে। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর ভারতের প্রথাগত ফিলিস্তিনপন্থী নীতি থেকে সরে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নে নজর দেন। ২০১৭ সালে প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তেল আবিব সফর করেন তিনি। এই সফর থেকে দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বের গোড়াপত্তন হয় যা এখন রূপ নিয়েছে পরম বন্ধুত্বে।   

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৬:০৯:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪
১২০ বার পড়া হয়েছে

ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্রে লেখা `মেইড ইন ইন্ডিয়া

আপডেট সময় ০৬:০৯:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪

বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল, ধ্বংস হচ্ছে ঘর-বাড়ি, হুমকির মুখে পুরো একটি পজন্ম। ইসরাইলি বাহিনীর চালানো নির্বিচার হামলায় এই যখন ফিলিস্তিনের অবস্থা তখনও ইসরাইলকে গোপনে সাহায্য করে যাচ্ছে কয়েকটি শক্তিশালী দেশ। আর এমনই একটি দেশ হলো ভারত।

ইসরাইলের পরম বন্ধু হিসেবে নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে চেষ্টার কোনো কমতিই রাখছে না ভারত। তবে সম্প্রতি ইসরাইলকে রকেট ও বিস্ফোরক রপ্তানি করার খবরে আবারও আলোচনায় এসেছে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি। এক প্রতিবেদনে এমনই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা।

ঘটনার সূত্রপাত রহস্যময় এক জাহাজকে কেন্দ্র করে। গত ১৫ মে ভোরে স্পেনের কার্তাহেনা বন্দরের উপকূলে এসে পৌঁছায় মালবাহী জাহাজ বোরকাম। বন্দর থেকে অল্প দূরে সমুদ্রে অবস্থানরত এই জাহাজের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি পতাকা উড়িয়ে বিক্ষোভ প্রকাশ করে স্পেনের জনগণ। তাদের দাবি, এই জাহাজে করে ইসরায়েলের জন্য অস্ত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে এই ‘সন্দেহজনক’ জাহাজ পরিদর্শন করার আহ্বান জানায়।

তবে স্পেন সরকার কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগেই স্পেনের বন্দরে থামার পরিকল্পনা বাতিল করে স্লোভেনিয়ার বন্দর কোপারের উদ্দেশে রওনা হয়ে যায় বোরকাম নামের জাহাজটি। এতে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়।

আল জাজিরার হাতে কিছু নথি এসেছে, যা থেকে জানা গেছে এই জাহাজটিতে ভারত থেকে নিয়ে আসা বিস্ফোরক উপকরণবোঝাই করা ছিল এবং এর শেষ গন্তব্য ছিল ইসরায়েলি বন্দর আশদোদ, যা গাজা উপত্যকা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে। আর মেরিন ট্র্যাকিং সাইটের তথ্য থেকে জানা যায়, জাহাজটি গত ২ এপ্রিল চেন্নাই থেকে ছেড়ে আসে।

এসব ঘটনা থেকে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে, ভারত ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র রপ্তানি করছে, যা দেশটির ‘সামরিক উদ্যোগ নয়, সংলাপের মাধ্যমে সমাধান’ নামক পররাষ্ট্রনীতির পরিপন্থী। বেশ কয়েক বছর ধরে ইসরায়েল ও ভারতের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটছে, তাই ভারতীয় অস্ত্র বা উপকরণ ইসরায়েলের হাতে এসে পৌঁছানোর এবং তা গাজায় ব্যবহার অসম্ভব কিছু নয়।

৬ জুন নুসেইরাত আশ্রয়শিবিরে ইসরায়েলি বোমাহামলার পর ফিলিস্তিনি কুদস নিউজ নেটওয়ার্ক একটি ভিডিও প্রকাশ করে। সেখানে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষেপ করা একটি ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ দেখানো হয়। ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষে পরিষ্কারভাবে একটি লেবেল দেখা যায়, যেখানে লেখা ছিল, ‘মেইড ইন ইন্ডিয়া।

ইসরায়েলের সঙ্গে শুধু রকেট নয়, ড্রোন নিয়েও লেনদেন রয়েছে ভারতের। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে গৌতম আদানির প্রতিষ্ঠান আদানি ডিফেন্স অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ও ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান এলবিট সিস্টেমসের যৌথ উদ্যোগে হায়দ্রাবাদে ড্রোন উৎপাদন কারখানার উদ্বোধন হয়।

ভারত ১৯৫০ সালে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিলেও দুই দেশের কূটনীতিক সম্পর্ক তৈরি হয় ১৯৯২ সালে। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর ভারতের প্রথাগত ফিলিস্তিনপন্থী নীতি থেকে সরে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নে নজর দেন। ২০১৭ সালে প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তেল আবিব সফর করেন তিনি। এই সফর থেকে দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বের গোড়াপত্তন হয় যা এখন রূপ নিয়েছে পরম বন্ধুত্বে।